একজন নির্লোভ সাংবাদিকের মধ্যাহ্ন দিবাবসান

bcv24 ডেস্ক    ০২:৩৯ পিএম, ২০১৯-০১-১৮    778


 একজন নির্লোভ সাংবাদিকের মধ্যাহ্ন দিবাবসান

২০১৬ সালের ২১ জুন একজন নির্লোভ ও কাজপাগল সাংবাদিককে নিয়ে তাঁর জন্মদিনে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। লিখেছিলাম ‘বকর ভাই; কুর্ণিশ গুরু বলে আজো চিৎকার করে উঠি’। পরের বছর ২০১৭ সালের একই দিনে নতুন কোন স্ট্যাটাস না দিয়ে একই স্ট্যাটাস শেয়ার করেছিলাম। আর ২০১৮ সালের ২১ জুন নতুন স্ট্যাটাস দিলাম, বকর ভাই; ‘মানুষ এত ভাল হয় কিভাবে নিজের ক্ষতি করে?’।

আগামী ২১ জুন জন্মদিন আসার আগেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। প্রয়াণ হয়েছে দৈনিক মানবকণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু বকর চৌধুরীর। গত সোমবার আজিমপুর কবরস্থানে পিতার কবরে তাকে চিরদিনের জন্য শুইয়ে দেয়া হয়েছে। শত ডাকলেও তিনি আর জাগবেন না।

মানবকন্ঠে চাকুরি জীবনের প্রায় ৮ বছরে এই প্রথম ছুটি নিলেন তিনি। চিরদিনের জন্য ছুটি। যাকে হাজার অনুরোধে একদিনের জন্যও ছুটি নেওয়ানো যায়নি সেই আবু বকর ছৌধুরী এবার একেবারেই ছুটি নিয়ে নিলেন!

মরণেরে কে রুধিতে পারে? পরপারে যেতে হবে সবাইকেই। তাই বলে কি এত তাড়াহুড়া করে যাওয়াকে মেনে নেয়া যায়? সবাইকে অপ্রস্তুত রেখে তাড়াহুড়া করেই চলে গেলেন বকর ভাই। তার তো এখন, পেশাগত দিক দিয়ে যখন তার অবস্থান মধ্য গগনে, তখন তার এমন হঠাৎ চলে যাওয়া আমাদের জন্য বড় বেদনার, বড় কষ্টের।

আমরা যারা আবু বকর চৌধুরীকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি, তার মত নিলোর্ভ হওয়ার চেষ্টা করেছি, কাজপাগল হওয়ার চেষ্টা করেছি, সাদা মনের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছি, তাদের জন্য এ দুঃখ কোনভাবেই পুষিয়ে নেয়ার নয়।

আদর্শে নিষ্ঠাবান আবু বকর চৌধুরী, যিনি হাসিমুখে সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন তাঁর প্রস্থান আমাদের বড় বেশি ব্যথিত করে, বড় বেশি বেদনাপ্লুত করে।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় যখন আদর্শহীনতা প্রকট হয়ে উঠেছে, নিস্বার্থ নির্লোভ পেশাদারি মানসিকতা উধাও হয়ে গেছে, তখন আবু বকর চৌধুরী ছিলেন আমাদের কাছে আশার আলো। আবু বকর চৌধুরী ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি সব ধরনের চাওয়া-পাওয়ার উর্ধে ছিলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধার নানা প্রস্তাব পাওয়ার পরও প্রত্যাখান করেছেন। আজ তার মৃত্যুতে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, নিরন্তর পথ চলায় তার আলোর বিভায় আমরা আলোকিত হয়েছি। যাত্রা পথের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে তার পরশ আমার যাত্রা পথকে মসৃণ করেছে। সাংবাদিকতা জগতের সেই আলোকিত মানুষ আবু বকর চৌধুরী আমাদের ছেড়ে চির বিদায় নিয়েছেন।

অনেক কাছ থেকে দেখা এই মানুষটি আমাকে বিস্মিত করেছেন। তাঁর মধ্যে দেখেছি, মানবিকতার তাড়না। দেখেছি, আপন-পরের এক অনন্য আশ্রয়। শিখেছি হিমালয়সম বিনয়। যাত্রাপথে মানুষকে কতো অনামিশা পাড়ি দিতে হয়। আমাকেও দিতে হয়েছে। আবু বকর চৌধুরীর মত বিরলপ্রজ মানুষ আমার সামনে আলোর মশাল নিয়ে শেরপার মত দাঁড়িয়ে ছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। তাঁর পরশে পাহাড় অভিযাত্রাও সহজিয়া হয়ে ওঠে।

আমি হিমালয় জয় করিনি। পাড়ি দিয়েছি আটলান্টিক। পেছনে চেয়ে যখন দেখতাম ধূসর মরুভুমি, অজেয় সব পাহাড়। দেখতাম অবারিত সবুজের প্রান্তজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রশান্তির বিন্যাস। তখন মানসপটে আবু বকর চৌধুরী আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতেন। নিবেদিত আর সাবলীল নির্লিপ্ততায় তিনি তার পরিবেশ, প্রতিবেশকে আলোকিত করে গেছেন। সময়ের সীমানা পেরিয়ে যে মানুষ আমাকে আজীবন তাড়িত করবেন তিনি প্রিয় আবু বকর চৌধুরী। হৃদয়ের গভীর অনুরণন থেকে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা অমলিন থাকবে চিরকাল। আটলান্টিকের এ পারে আমি। পরপারে বকর ভাই। শেষ বারের মত হাতটি ছুঁয়েও দেখতে পারিন, যে হাতের আশির্বাদ আমার মাথার উপর ছিল সবসময়।

দূর দেশের পান্থজন নয়, অনুরাগ আর আনুগত্যের গভীরতা নিয়ে বলছি, আপনি ওপারে অনেক ভালো থাকুন বকর ভাই। দূরে এবং সান্নিধ্যে থেকে আপনার সাথে কাজ করেছি এক দশকেরও বেশি সময়। নির্লোভ, অহংকারহীন, আপনার পরোপকার দেখে মুগ্ধ হয়েছি প্রতিটি ক্ষণ।

অনেক আগেই জীবনের বাঁক বদলে গেছে আমার। বদলে গেছে আমার ঠিকানা। আজ আটলান্টিকের পারে যখন আড্ডায় বসি, সময় গড়ায়, রাত গভীর হয়, আমি বকর ভাইয়ের অবয়ব দেখি। মনটা আনচান করে ওঠে। অজান্তেই হাত উপরে চলে যায়। ফোনটা হাতে নিই। ‘কুর্ণিশ গুরু’ বলে চিৎকার করে উঠি। বিভ্রম ভাঙে। বকর ভাই থেকে যান মনের গহীন গভীরে। অবচেতনতায় মনে হয়, বকর ভাই যেন বলছেন ‘এই পাগলা অনেক হয়েছে এবার বাড়ি যাও’। এভাবে যে বকর ভাই যে কত রাত আমাকে বাড়ি ফিরিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।

আমার সাংবাদিক হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনের ‘কারিগর’ বকর ভাই। তাই বলতে হচ্ছে, জীবনের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি ক্ষণে উজ্জ্বল থাকবে তার স্মৃতি। মনের গভীরে সর্বদাই অনুরণিত হতে থাকবে একটি আপ্তবাক্য, ‘বকর ভাই, আপনার স্মৃতি সবখানে পাতা, আমি কোথায় করিব প্রণাম, কোথায় রাখিব মাথা?

আমি ছিলাম মানবকন্ঠের কূটনৈতিক প্রতিবেদক। ‘অর্থনীতি প্রতিদিন’ থেকে চাকুরি ছেড়ে দেয়ার পর একদিন ফোন করেছিলাম বকর ভাইয়ের আরেক ঘনিষ্টজন, সাংবাদিকতায় আমার আরেক গুরু আজকের কাগজের সাবেক মফস্বল সম্পাদক সমর সরকারকে। সমর দা অর্থনীতি প্রতিদিনের যুগ্ম সম্পাদক থেকে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে মানবকন্ঠে যোগ দেন। আমি অর্থনীতি প্রতিদিন ছেড়ে দেয়ার পর সমর দাকে বিষয়টি জানালে তিনি বললেন, মানবকন্ঠে চল আস, বকর ভাই এখন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। যে কথা সেই কাজ। একদিন গেলাম। কথা এবং দুই-একদিনের আনুষ্ঠানিকতার পর যোগ দিলাম। এ যেন এক চমক। মানবকন্ঠে তখন আমার যায়যায়দিনের অনেক কলিগ কাজ করতেন। যাদের সঙ্গে যায়যায়দিনে পাশের টেবিলে বসে কাজ করেছি তাদের মধ্যে সোহেল হায়দার চৌধুরী তখন ভারপ্রাপ্ত চিফ রিপোর্টার এবং সিদ্দিকুর রহমান সিনিয়র রিপোর্টার।

আমি যখন মানবকন্ঠে যোগ দিই তখন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা জোরদার। রাজপথ উত্তপ্ত। কূটনৈতিক পাড়ায় দৌঁড়ঝাপ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে আমি যে’দিন মানবকন্ঠে যোগ দিই সেদিন আমার আগের কলিগরাও বেশ বিস্মিত হয়েছেন। কেউ জানেন না অথচ আমি অফিসে কাজ শুরু করলাম। কারণ নীরবে পুরো কাজটি করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বকর ভাই।

কাজে যোগ দিলাম। প্রথম দিনেই করলাম লিড নিউজ ‘ঢাকায় তারনকো মিশন শুরু’। এভাবে আমার নিউজ একমাসে ২৫ দিন লিড হলো। সবার চোখ কপালে। কূটনৈতিক বিটে আমার বাঁক পরিবর্তন শুরু হল। এর পর থেকে আমি বকর ভাইয়ের আরো ¯েœহ পেতে শুরু করলাম। প্রতিদিন সকাল ১২ টায় আমি, বকর ভাই, সমর দা একসঙ্গে অফিসে ঢুকি আর রাত দেড়টায় এক সঙ্গে বাসায় যাই। এক সঙ্গে ক্যান্টিনে খাওয়া-দাওয়া, এক সঙ্গে চা-পান- সিগারেট সবই চলে। এক পর্যায়ে আমাদের আড্ডা-খাওয়া দাওয়ার পরিধি আরো বেড়ে গেল। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক গুপু ত্রিবেদী, ছড়াকার ওবায়দুল গনি চন্দন। এক সঙ্গে পাঁচজনের আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে অফিসে রীতিমত আলোচনার ঝড়।

আমার ডে অফ ছিল শুক্রবার। ডে অফের দিন দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। একদিন জুমার নামাজ পড়ে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বকর ভাই বাসার নিচে এসে ফোন দিলেন। বললেন নিচে নাম। নামলাম। বললেন, গাড়িতে ওঠ। তোমার আবার কিসের ডে অফ! জাননা আমি শুক্রবারে একা অফিসে থাকি? সঙ্গে সঙ্গে তার সাথে যেতে রাজি হলাম। আমার ওপর শুধু একজনেরই এ ধরনের অধিকার প্রয়োগ করার অধিকার ছিল। তিনি বললে অফ-ডে বাতিল করতাম। আমেরিকা আসার আগ পর্যন্ত আর কোন দিন শুক্রবার অফিসে না গিয়ে থাকতাম না। আমি বুঝতাম বকর ভাই একা হলে অনেক চিন্তা করতেন। তিনি সঙ্গ চাইতেন।

বকর ভাই অফিসে, ক্যান্টিনে বা অন্য কোথাও যখনই খেতে বসেছেন যতজন তার সঙ্গে থাকতেন সবার বিলটা তিনিই দিয়ে দিতেন। এছাড়া মানবকন্ঠ যখন আর্থিক সংকটে পড়ে তখন বকর ভাই ছিলেন অফিসের কলিগদের জন্য ঋণের ব্যাংক। অফিসে আসার সময় একদিন দেখি বকর ভাইয়ের পকেটে অনেক টাকা। জানতে চাইলাম হঠাৎ এত টাকা কেন? জবাবে বলল ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছি। এক মাস অনেকের বেতন হয় না। অনেকেই টাকা ধার চাইলে দিতে হবে তাই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। যা বললেন তাই দেখলাম। অফিসে ঢোকার পর অন্তত চারজনকে ৩০ হাজার টাকা তিনি নিজের পকেট থেকে দিয়ে দিলেন। মজার ব্যাপার, বকর ভাইয়ের কাছ থেকে কে কত টাকা ধার নিয়েছেন সেটি বোঝা যেত যেদিন মানবকন্ঠের বেতন হত। দেখতাম, সবাই বেতন নিয়ে বকর ভাইকে ধারের টাকা ফেরত দিচ্ছেন। যেখানে স্টাফদের প্রতি মালিকের দরদ নেই সেখানে বকর ভাইয়ের এ দরদ সবার হৃদয় স্পর্শ করত।

আরেকটি ঘটনা। মানবকন্ঠ যখন আরো অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে শুরু করল তখন একাউন্টস থেকে স্টাফদের জানিয়ে দেয়া হলো সম্পাদকের অনুমোদন সাপেক্ষে বেতনের টাকা থেকে এডভান্স নেয়ার। এ কথা জানার পর সবাই গেলেন বকর ভাইয়ের কাছে। তিনি সবার নামই সুপারিশ করে দিলেন। একাউন্টস বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর দৌড়ে আসলেন বকর ভাইয়ের রুমে। বললেন, স্যার আপনিতো দেখি সবাইকে একই দিনেই সুপারিশ করে দিলেন। জবাবে বকর ভাই বললেন, এখানে যারা চাকুরি করেন তারা সবাই আমার সন্তানের মত। সবাই আমার কাছে সমান। সবাইকে একদিনে অনুমোদন দেয়া হবে, সবার পকেটে এক সঙ্গে টাকা ঢুকানো এটা আমার দায়িত্ব।

মানবকন্ঠ অফিসে প্রায়ই আসতেন সদ্য বিদায়ী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি আসতেন আশিয়ান গ্রুপের এমডি ও মানবকন্ঠের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের কাছে। তিনি নজরুল সাহেবের সঙ্গে দেখা করে ফিরে যাওয়ার সময় নিউজ রুমে ঢুকে বকর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যেতেন বা বকর ভাই আছেন কি না খোঁজ নিয়ে যেতেন। একদিন সকালে নজরুল সাহেবের সঙ্গে দেখা করে ফিরে যাওয়ার সময় বকর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হল হাসানুল হক ইনুর। কুশল বিনিময়ের পর মন্ত্রী বললেন, ‘বকর এভাবে আর কতদিন থাকবা? পারলে এবার একটা প্লটের জন্য আবেদন কর’। সঙ্গে সঙ্গে আশিয়ানের ডিএমডি সাইফুল সাহেব বললেন, ‘ইনু ভাই আমাদের হাজার হাজার প্লট। আজ দুই বছর ধরে বলছি বকর ভাইকে একটি ফ্রি প্লট নিতে। তিনি রাজী হচ্ছেন না। আর আপনি বলছেন সরকারি প্লটের জন্য আবেদন করতে? একই সঙ্গে তিনি বললেন, এই দেখুন গত এক মাস ধরে বকর ভাইয়ের জন্য একটি প্রাইভেট কারের ব্যবস্থা করেছি, ড্রাইভার দিয়েছি, তিনি এখনো ট্রিপের গাড়ীতে যাতায়ত করেন’। এই হল বকর ভাই।

আমি সব সময় মোবাইল বন্ধ করে রাতে ঘুমাতাম। কি কারণে যেন ২০১৪ সালের ১৬ আগষ্ট সকালে মোবাইল বন্ধ ছিল না তা মনে পড়ছে না। সকাল ৮ টার পর দেখি বকর ভাইয়ের ফোন। ফোন পেয়ে চমকে উঠলাম। রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে বলেন, দ্রুত নিচে নাম। তুহিন ফোন করেছে। চন্দন অসুস্থ। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের মোড়ে আস। আমি রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে গিয়ে দেখি বকর ভাই অপেক্ষা করছেন। রিকশায় উঠে কলাবাগানে তুহিন ভাইয়ের বাসার দিকে চললাম। গলিতে ঢুকতেই বিপরীত দিক থেকে আসা অ্যাম্বুলেস দেখতে পাই। হাত উঠানোর পর অ্যাম্বোলেন্স থামল। আমরা অ্যাম্বুলেন্সে উঠে দেখি চন্দন শুয়ে আছে। কোন সাড়া শব্দ নেই। বকর ভাই মাথায় হাত বুলিয়ে দেখলেন। চন্দনকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলাম। এই ফাঁকে বকর ভাই আমাদের মেডিকেল রিপোর্টার বাবু ভাইকে কল দিলেন এবং সেখানে থাকতে বললেন। জরুরী বিভাগে চন্দনকে নামানোর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ভেতরে নিয়ে গেলেন। আমি আর বকর ভাই বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। আমি বকর ভাইকে বললাম, মনে হয় চন্দন নাই। হায়রে সরল মানুষ বকর ভাই। আমাকে বললেন, আরে না। পরে ডাক্তার আনুষ্ঠানিকভাবে জানালো চন্দন আর নেই। বকর ভাইয়ের চোখে পানি। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। চন্দনের লাশ বুঝে নিয়ে সরাসরি গুলশানের মানবকন্ঠ অফিসে নিয়ে আসলাম। দাফন-কাফন সবকিছুর ব্যবস্থা করা হল বকর ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে। বকর ভাই বাকরুদ্ধ। আমাকে বলে চন্দনের নিউজটা তুমি লিখ। আর আমি মারা গেলেও তুমি লিখবে।

বকর ভাই। আমি আপনার কথা রাখতে পারিনি। আপনার মৃত্যুর সংবাদ আমাকে লিখতে হয়নি। হয়তো এটি আমি পারতামও না। কারণ সব সাংবাদিকের পক্ষে সবসময় হয়তো সব নিউজ লেখা সম্ভব হয় না।

বকর ভাই, মাত্র ৫৪ বছর বয়সে আপনার এই চলে যাওয়া আমাদের জন্য, দেশ-সমাজের জন্য কত বড় ক্ষতি আপনি নিজেও তা হয়ত কোনদিন চিন্তা করেননি। আপনার মত মানুষ এই সময়ে বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অজানা অভিমানে আপনি আমাদের পর করে চলে গেলেন। এ আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। বিদায় বকর ভাই। ওপারে ভালো থাকুন। এ আমার নিরন্তর কামনা।

লেখক: শাহাব উদ্দিন সাগর, নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক আজকাল, নিউইয়র্ক।


রিটেলেড নিউজ

বাংলাদেশে সবচেয়ে মজলুম গোষ্ঠী সাংবাদিকরাই

বাংলাদেশে সবচেয়ে মজলুম গোষ্ঠী সাংবাদিকরাই

বাবলু চৌধুরী

বাংলাদেশে শ্রমিক হিসেবে সবচেয়ে মজলুম গোষ্ঠী হল সাংবাদিকরা। তাদের কেবল বেতন সামান্য তাই নয় সাংবাদ... বিস্তারিত

কানাডায় নারীর হাইমেন সার্জারি এখনও বৈধ কেন?

কানাডায় নারীর হাইমেন সার্জারি এখনও বৈধ কেন?

বাবলু চৌধুরী

আমরা এখন ২০২২ সালের সময়ের জীবন যাপন করছি। এমন সময়ে যদি শোনেন ভার্জিনিটি একটি পণ্য আপনার সামর্থ্য থ... বিস্তারিত

বিশ্বাস ও সম্মান গাঁথা থাকলে সব ভালোবাসাই প্রেমের কাব্য

বিশ্বাস ও সম্মান গাঁথা থাকলে সব ভালোবাসাই প্রেমের কাব্য

বাবলু চৌধুরী

ইতিহাসে ভালোবাসার নানা গল্প। গল্প নিয়ে মহাকাণ্ড। কেউ বলেন ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনে রোমান দেব-দেবীর রান... বিস্তারিত

ওরা ধর্ষক, আমরা দর্শক: বিকল রাষ্ট্রযন্ত্রের ‘কুম্ভকর্ণের সুখনিদ্রা’ কখন ভাঙবে?

ওরা ধর্ষক, আমরা দর্শক: বিকল রাষ্ট্রযন্ত্রের ‘কুম্ভকর্ণের সুখনিদ্রা’ কখন ভাঙবে?

বাবলু চৌধুরী

ডিসকভারি চ্যানেলে বাঘ যখন তার হিংস্র থাবায় শিকারীকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে তাকে ভক্ষণ করে তখন আমরা শ... বিস্তারিত

শেখ হাসিনার হাতে পিতার পতাকা

শেখ হাসিনার হাতে পিতার পতাকা

তোফায়েল আহমেদ

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। মওলানা আবদুল হাম... বিস্তারিত

বিষ্ফোরণে নিহত আবুল কাশেমের পরিবারের কী হবে?

বিষ্ফোরণে নিহত আবুল কাশেমের পরিবারের কী হবে?

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান

যৌবনের পুরো সময়টা কাটিয়েছিলেন প্রবাসে। সুখ নামক সোনার হরিণ ধরা হয়নি ওমানের তপ্ত রোধে ১৮ বছরের বেশ... বিস্তারিত

সর্বশেষ

তপসিলের পর তেজগাঁও কার্যালয়ে বসবেন শেখ হাসিনা

তপসিলের পর তেজগাঁও কার্যালয়ে বসবেন শেখ হাসিনা

bcv24 ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আলাদা কার্য... বিস্তারিত

১২৪ টাকায়ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ব্যাংক

১২৪ টাকায়ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ব্যাংক

bcv24 ডেস্ক

এক বছর আগে ঘোষিত দরের চেয়ে ১-২ টাকা বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় ছয়টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্... বিস্তারিত

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১৮৯৫

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১৮৯৫

bcv24 ডেস্ক

সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জন... বিস্তারিত

চোখের ইশারায় কাজ করবে কম্পিউটার!

চোখের ইশারায় কাজ করবে কম্পিউটার!

bcv24 ডেস্ক

চোখের ইশারায় খুলে যাবে অ্যাপ, আঙুলে ছুঁয়ে সরাতে হবে স্ক্রিন। মাথা নাড়ালেই হবে অনেক কাজ। প্রযু... বিস্তারিত